নিউজ ক্যাভারেজ

                                                                                                       সংবাদ বিজ্ঞপ্তি/প্রেস রিলিজ

একবছর ধরে হয়রানীর শিকার একলাখ দশ হাজার ভিসা প্রত্যাসীদের ভিসা ডেলিভারী ও এপয়েন্টমেন্ট সমস্যা এবং যাবার পূর্বে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ নিশ্চিত করে আগামী পাঁচ বছরে ইউরোপে দশ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

 

ইতালীতে কাজের জন্য ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাসী অভিবাসী কর্মীরা দীর্ঘ প্রায় ৬/৭ মাস অপেক্ষার পরও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়ায় নানাবিধ ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।দ্রুত অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালুর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে ইতালী ও বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনাসহ ইউরোপের যেকোন দেশে যাবার পূর্বে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের উপর জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছে, বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ), ইতালবাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতি এবং বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতি।

বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ), ইতালবাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে, ইতালবাংলা সমিতি সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান বলেন, গত একবছর যাবৎ আটকে থাকা এক লাখ দশ হাজার ভিসা ডেলিভারী সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্শন করতে গত ৮ই সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড: ইউনুসের কাছে দাবী জানালে তিনি ইতালীর প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলনীর সাথে কথা বলে ভিসা সমস্যর একটা আংশিক সুরাহা করেছেন। ইতিমধ্যে ঢাকাস্থ ইতালীয়ান দুতাবাস ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ২০.০০০ পাসপোর্ট ডেলিবারী করার ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে ইতালী ভিসা প্রত্যাসীদের সংখ্যা প্রায় একলাখ দশ হাজার। যদি এক বছর পরে ৪০.০০০ পাসপোর্ট ডেলিভারী করা সম্ভব না হয় তাহলে ১১০.০০০ পাসপোর্ট এর কাজ করতে আরো অন্তত দুই-তিনবছর বছর সময় লাগবে। এতে শুধু বাংলাদেশের অভিবাসী কর্শীদের দুর্ভোগন্তিই বাড়বে। বর্তমানে ঢাকায় ইতালিয়ান দূতাবাসের চলমান ভিসা প্রসেসিং সংকট শুধু মাত্র তাদের জনবল  সংকটের কারণে। ইতালিয়ান দূতাবাসের বর্তমানে তাদের স্বাভাবিক ভিসা প্রসেসিং এর সক্ষমতা মাসে ২৫০০ বছরে ৩০ হাজার ভিসা মাত্র। এই সক্ষমতা দিয়ে বাংলাদেশে লক্ষাধিক ভিসা আবেদনকারীদের সমস্য সমাধান সম্ভব নয়। ২০২৩-২০২৪ সালে একসাথে এক লাখের উপরে ওয়ার্ক পারমিট বাংলাদেশে আসার কারণে বিশাল পরিমাণে ভিসা আবেদন জমা হওয়ায় দুতাবাসের জনবল  সংকটের কারণে ভিসা প্রসেসিং ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা এখন অভিবাসী কর্মীদের একটি মানবিক সংকটে রুপান্তিরিত হয়ে। সমাধানে অনতি বিলম্বে ইতালীয়ান দূতাবাসের দশগুন জনবল বৃদ্ধির জন্য ইতালী সরকারের সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। গত বছরে আটক ৪০.০০০ পাসপোর্ট জমার পরে আরো ৫০.০০০ আবেদনকারী ভিসা জমা করার এপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না। ইতালী সরকার ইতিমধ্যে ২০২৫ সালে স্পন্সর আবেদন ১লা নভেম্বর হতে জমার প্রসেসিং  ফরম খোলার ঘোষনা করেছে যার অর্থ আগামী ৬ মাসে আরো ৩০/৪০ হাজার নতুন ওয়ার্কপারমিট যুক্ত হয়ে আরো নতুন চাপ সৃস্টি হবে। সুতরাং ইতালীয়ান দূতাবাসে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আমরা ইতলী দুতাবাসের ভিসা প্রসেসিং সক্ষমতা দশ গুন বৃদ্ধির জোর দাবী জানাচ্ছি।

গত ১৯৯২ সাল হতে ইতালীর ইমিগ্রেশন নিয়ে কর্মরত ইতালীতে ইতালবাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতি প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জনাব শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান আরো বলেন, বর্তমানে ইউরোপে এক কোটি শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে।  এই ঘাটতি পূরণে ইতিমধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিশেষ করে ইতালি ও জার্মান সরকার বাংলাদেশ হতে শ্রমশক্তি আমদানি করতে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এখানে একটি সমস্যা বিরাজ করছে সেটা হচ্ছে, আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপে যাচ্ছেন তারা নিজেদেরকে সঠিকভাবে প্রস্তুত না করেই সেখানে যাচ্ছেন, যার ফলে সেই শ্রম বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেখানে এক কোটি লোকের ঘাটতি অন্যদিকে প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দক্ষতা ও ভাষা জানা শ্রমিকের অভাব থাকার কারণে ইউরোপের এই বাজারটিকে আমরা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। তিনি ইতালী সরকার অনুমোদিত “বাংলা ড্রিম প্রকল্প” মাধ্যমে ভাষা শিখে কোনপ্রকার সমস্যা ছাড়া ইতালীয়ান ভিসা পাওয়া

এই বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে একযোগে কাজ করার জন্য ইতিমধ্যে কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)র সাথে ট্রেনিং সেন্টার সমূহে ইতালিয়ান ভাষা ও ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে শ্রমিকদের প্রস্তুত করার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাব জানিয়েছি। আমরা আশা করি, আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, আমরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লক্ষ বাংলাদেশের কর্মীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতে সক্ষম হব। ইতিমধ্যে বাংলা ড্রিম প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা একটি পরীক্ষামূলক পাইলট প্রজেক্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এখানে আমরা “বাংলা ড্রিম পাইলট প্রজেক্ট” এর মাধ্যমে ১০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষন দিয়ে কাজ ও ইতালিয়ান ভাষা শিখিয়ে ইতালীয়ান কর্মদাতার সহায়তায় ও দূতাবাসের সহায়তায় পরিক্ষামুলক ভাবে অল্প সময়ে এপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা করাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলা ড্রিমের কর্মীগণ আগামী সপ্তাহে ইতালিতে তার কর্মস্থানে যোগদান করবেন। আমরা আশা করি “বাংলা ড্রিম পাইলট প্রজেক্ট”  এর মত আগামী দিনে EU BANGLADESH TALENT PARTNERSHIP PROGRAM এর আওতায় বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য অল্প খরচে ইউরোপের বাজারে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি করতে সক্ষম হব।

বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ) এর সভাপতি, জনাব খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, ভুক্তভোগীদের সাথে ভিএফএস গ্লোবাল কর্মী/অফিসারদের অসৌজন্য মূলক অচরন ও সকল ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া পর্যন্ত ব্যাকলগে থাকা ইমেল চেকিং ও ট্রেকিং এর মাধ্যমে সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ) এর সাধারন সম্পাদক, সামসুন নাহার আজিজ লীনা বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যে কোন ধরনের বানিজ্য, দালালের দৌরাত্ব, প্রতারকদের হয়রানি সহ সকল হয়রানির পথ বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, জয়নাল আবেদীন জয় বলেন, ল্যাঙ্গুয়েজ, ভোকেশনাল ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অধিকতর জনপ্রিয় করতে এবং প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএমডিএফ ও ইতালবাংলা সদস্যবৃদ মোহাম্মদ আলী, শাহ আবিউর রহমান, মাসুদ পারভেজ, রাজী, আনোয়ার হোসেন পান্না, আমিনুল ইসলাম সহ শতাধিক ইতালীতে কাজের জন্য ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাসী অভিবাসীকর্মীগণ।

Scroll to Top